প্রকাশ্যে চলে মাদক বেচাকেনা নেতৃত্বে স্বামী-স্ত্রী

সাখাওয়াত হোসাইন: 
শহরের পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড বৈদ্য ঘোনা এলাকায় স্বামী-স্ত্রী দুই জনে মিলে গড়ে তুলেছেন ইয়াবার বিশাল  সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নাছরিন সুলতানা প্রকাশ আছু বেগম ও তার স্বামী রাসেল মাদক নিয়ে অনেক বার গ্রেপ্তার হলেও কারাগার থেকে বেরিয়ে শুরু করেন ইয়ারা ব্যাবসা। সম্প্রতি সময় তাদের সিন্ডিকেটের চিহ্নিত মাদক কারবারি অনেকই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

স্থায়ীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আছুর মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও মাদক বিক্রির টাকায় কোটিপতি বনে যাওয়ার কথা প্রকাশ হলে নানা মহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন এই মাদক সম্রাজ্ঞী। এছাড়া পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডে এখন মাদকের অন্যতম হট স্পট। হাত বাড়ালেই মিলছে সকল ধরনের মাদক। প্রকাশ্যে চলছে এর বেচা কেনা। আর এই মাদকের অধিকাংশ ক্রেতাই হচ্ছে কিশোর ও যুবক। শহরের বৈদ্যঘোনা খাঁজা মঞ্জিল এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করেন নাছরিন সুলতানা প্রকাশ আছু বেগমের সিন্ডিকেট। 



তার বিরুদ্ধে উল্লেখিত বিষয়ে দৈনিক মেহেদী পত্রিকায় গত ৯ ও ১২ অক্টোবর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হইলে, তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্তু এদিকে গতকাল (১৩ অক্টোবর) দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকায় নাসরিন সুলতানা প্রকাশ আছু একটি অবান্তর প্রতিবাদ দিয়েছেন। প্রতিবাদে তিনি তার স্বামী যে হোটেলে চাকরি করে বলেছেন, প্রকৃত পক্ষে ওই হোটেলে তারা ব্যবসা আড্ডায় মজে থাকেন প্রতিদিন। প্রতিবাদে সাংবাদিক টাকা চেয়ে বলে যে কথা উল্লেখ করেছে, তার কোন তথ্য প্রমাণাদি তার কাছে নেই। তিনি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ডাকতে চেষ্টা করছেন। অথচ প্রতিটি নিউজের ক্ষেত্রে তার কাছ থেকে নেওয়া বক্তব্যের ভয়েস রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তিনি যে ভাইয়ের মেয়ে নাহিদার জামাই সোহেলের কথা প্রতিবাদে উল্লেখ্য করেছেন, সেই নিউজ তো তাঁহার নয়। প্রকাশিত নিউজে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ থাকার পরও কেন সে উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ভাবে বোনের মেয়ে জামাই কে অহেতুক হয়রানির মূলক ফায়দা লুটছে বলে সামাজিক যোগাযোগ ও কক্সবাজারের এক স্থানীয় পত্রিকায় অপ্রচার চালিয়েছে। যাহা সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন!



স্থানীয় বৈদ্য ঘোনা এলাকার বাসিন্দারা বলেন- বৈদ্য ঘোনা এলাকার অধিকাংশ খুন, মারামারির ঘটনা মাদকের জন্যই হয়। গত কয়েকদিন ধরে জেলার স্থানীয় গণমাধ্যমে আছু বেগমের মাদক কারবারের বিষয় সংবাদ প্রকাশ হলে এলাকাবাসীর মনে কিছু টা স্বস্তি ফিরে আসে। সে হয়তো আইনের আওতায় আসবে! সেই থেকে এলাকাবাসির ধারণা এবার বৈদ্য ঘোনার এই চিহ্নিত মাদক কারবারির বিচার হবে। ধংশ হবে তার মাদক সিন্ডিকেট। গত কয়েক মাস ধরে শহরের বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী অনেকই আইনের হাতে গ্রেপ্তার হলেও আছু এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এনিয়ে এলাকাবাসীর মনে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ।



এলাকাবাসী আরও বলে- শহরের শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্যতম সে। তার পরিবারে স্বামী ও ছেলেসহ সবাই জড়িত এই মাদক ব্যবসার সাথে। সবার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকের মামলা। শহরে মাদক রাণী হিসাবেও বেশ পরিচিত লাভ করেছে এই আছু বেগম। মাদকের এই ডিলার যদি আইনের আওতায় না আসে তবে বৈদ্য ঘোনা এলাকার মাদক কারবার কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। 



সে শহরের পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড বইল্ল্যা পাড়ার বাসিন্দা মৃত্যু মোঃ রফিকের বড় বোন। আর সে রফিক ছিলেন শহরের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার। এছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার। ২০১৮ সালে প্রশাসনের তৎকালীন চলমান ইয়াবা জিরো টলারেন্স  অভিযানে ক্রসফায়ারে মৃত্যুবরণ করেন রফিক। সেই সুবাদে তারই এই অন্ধকার জগতের হাল ধরেন তার আপন বড় বোন এই ইয়াবা সম্রাজ্ঞী নাসরিন সুলতানা প্রকাশ আছু বেগম।



আছুর পরিবারের সবার নামে সদর মডেল থানায় মাদকের মামলা রয়েছে। কক্সবাজার ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে (২০ ডিসেম্বর) কক্সবাজার প্রিন্স অব কক্স নামের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে সদর মডেল থানার পুলিশ নাছরিন সুলতানা আছু বেগমকে গ্রেফতার করেন। এছাড়া সদর মডেল থানা পুলিশের হাতেই সে একাধিকবার গ্রেফতার হন। জামিন পেয়ে সে বারবার ফিরে আসে একই পেশায়। পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের মধ্যেও চলছে আছুর ইয়াবা কারবার।



স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আছু বেগম ও তার পরিবারের সবাই পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। আছুর জীবনে এক এক করে সঙ্গী হয়ে এসেছে চারটি স্বামী। মোহাম্মদ নাছির, আব্দুর কাদের, ইউসুফ হালিম, মোঃ রাসেল। বর্তমানে তার জীবনে রয়েছে ৪নং স্বামী মোঃ রাসেল। আছু বেগমের ৪নং স্বামী রাসেলের বাড়ি কুমিল্লায়। রাসেলকে বিয়ের পর থেকে আছুর এই ভাগ্য পরিবর্তন। মোঃ রাসেল ও আছু বেগমের সাথে একই পরিবারে বসবাস করেন আছুর ১নং সাবেক স্বামী মোহাম্মদ নাছিরের বড় ছেলে ইমরান। সেই ইমরানের বিরুদ্ধেও অসংখ্য মাদকের মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগেও ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজের চেকপোস্টে আটক হয় ইমরান। তার মা আছু বেগম আট লক্ষ টাকা খরচ করে অল্প দিনের মধ্যে ছেলেকে জেল হাজতে বের করে আনেন। তারা সবাই শহরে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে বেশ পরিচিত। 



অনুসন্ধানে জানা যায়, আছু বেগম এবং তার ৪নং স্বামীর মোহাম্মদ রাসেলের নেই দৃশ্যমান কোন ব্যবসা। হঠাৎ বনেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। কয়েকবছর আগেও ছিল তাদের সংসারে টানাপোড়ন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। রাসেলকে বিয়ে করে বনে গেলেন কোটিপতি। আছু দম্পতি এখন অঢেল সম্পদের মালিক। তার স্বামী মোহাম্মদ রাসেল ব্যবহারের জন্য কিনেছেন দুইটি দামী বাইক, একটি ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রাইভেট কার। শহরের বিভিন্ন জায়গায় কিনেছে নামে-বেনামে জমি। বৈদ্যঘোনায় খাঁজা মঞ্জিল এলাকায় কিনেছে বসবাসের জায়গা, সে জায়গা তৈরি করেছে আলিশান বাড়ি। কিভাবে এই অল্প সময়ে এত সম্পদের মালিক হলেন আছু বেগমের পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রশ্ন? 



সাইফুল নামের এক ব্যক্তি বলেন- আছু বেগম এলাকায় নব্য কোটিপতি বললে চলে। রাসেলের ব্যবহারিত দুইটি বাইক ও কার দিয়ে সরাসরি টেকনাফ থেকে ইয়াবা আনেন আছু বেগম। সেগুলো আছুর স্বামী মোহাম্মদ রাসেল ও তার সহযোগী আবু তাহের প্রকাশ কালা তাহের বিভিন্ন জায়গায় খুচরা পাইকারি সাপ্লাই করে থাকেন। কালা তাহেরের নামেও রয়েছে সদর মডেল থানায় একাধিক মামলা।



এ কে সোহেলের বলেন- আমি গত ৪ বছর ধরে কক্সবাজারে সুনামের সাথে সংবাদিকা পেশায় নিয়োজিত আছি। আমি কখনো কারো সাথে আমার মহান সাংবাদিকতা পেশার অপব্যবহার করিনি এবং কখনো নিজ ইচ্ছায় কারো ক্ষতি ও করিনি। কোনো তথ্য প্রমান ছাড়া সে প্রতিবাদে  আমার নাম ও স্ত্রীর নাম উল্লেখ করে অপপ্রচার করেছে আমি জানি না! অথচ প্রকাশিত নিউজে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ থাকলেও কেন কি কারণে আমার সম্মানহানি করেছে তার জবাব দিতে হবে! এতে আমার ও আমার পরিবারের মানসম্মান হানি হয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। কারণ কোন সময় কোন দিন আমি নাছরিন সুলতানা প্রকাশ আছু বেগম কিংবা তার পরিবারের কারো সাথে কথা অথবা মোবাইলে আলাপচারিতাও হয়নি। সে কিভাবে আমি ফায়দা লুটছি ও টাকা চেয়েছি, না পেয়ে নিউজ করেছি উল্লেখ করতে পারে! 



এই বিষয়ে জানতে রাসেলের মুঠোফোনে কল 


দিলে মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানা প্র: আছু বেগমের মুঠোফোন কল দিয়ে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন- আমার এত বক্তব্য কেন লাগবে! আমাকে ইয়াবা তুমি দাও যে-নে?? ইয়াবা তোমার থেকে নিই যে আর কি??   



মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বলেন- আমরা প্রতিদিন অভিযান করতেছি। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যাদের পাচ্ছি তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় এনেছি। আমরা এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখবো। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাদকের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাকিব বলেন, কক্সবাজারের সকল জায়গাতে ইয়াবা বিস্তার যেন বাড়াতে না পারে পুলিশ কাজ করতেছে। এ বিষয় আমাদের কাছে নিউজ আছে, আমরা হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের অফিসাররাও চেষ্টা করতেছে।