নিজস্ব প্রতিবেদক:
শহরের ৮নং ওয়ার্ডের বৈদ্য ঘোনা এলাকা এখন মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈদ্য, ঘোনা এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে। সকল ধরনের মাদক। এই মাদকের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণক নাছরিন সুলতান প্রঃ আছু বেগম ও সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছু বুড়ি নামের আপন দুই বোনের হাতে। এই কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদকসেবিদের উৎপাত। পরিনত হচ্ছে সন্ত্রাসীদের অপরাধের স্বর্গ রাজ্য। এই দু'বোনের কারণে মাদকের দিকে ঝুঁকছে তরুন, যুবক থেকে শুরু করে কিশোর ছাত্ররা পর্যন্ত। এই মাদকের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো উদ্যোগই!
স্থানীয় সূত্র জানাযায়- নাছরিন সুলতান প্রঃ আছু বেগম এবং সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছু বুড়ি দু'জনই শহরের ৮নং ওয়ার্ড বইল্লা পাড়া বাসিন্দা মৃত্যু বাদশা মিয়ার কবিরাজের মেয়ে। তাদের বসবাস বৈদ্যঘোনা এলাকায়। বৈদ্য ঘোনা এলাকায় রয়েছে তাদেরই মাদকের রমরমা ব্যবসা। ঐ এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণক হিসেবে এই আছু বেগম ও তারই ছোট বোন কোনছু বুড়ির হাতে রয়েছে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। তারা দুই বোন শহরের মাদক রাণী হিসাবেও খুব পরিচিত লাভ করেছে ৮নং ওয়ার্ডে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়- দুই বোনের নামে আছে মাদক আইনে বেশ কয়েকটি মামলা। স্থানীয় সূত্রে মিলেছে পিলে চমকানো তথ্য সম্প্রতি ২০১৯ সালের (২০ ডিসেম্বর) কক্সবাজার প্রিন্স অব কক্স নামের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয় নাছরিন সুলতানা আছু বেগম। সদর মডেল থানা সূত্রে পাওয়া আছু বেগমের মাদক আইনের মামলা, এফআইআর নং- ৮৪/১৩৮০, ধারা- ৩৬ (১) সারণির ১০(ক)। পরে বহুদিন কারাবরণ শেষে জামিনে বের হয়ে আবারো মাদক কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠে আছু, তবে পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের মধ্যেও চলছে আছুর ও কোনছু বুড়ির ইয়াবা কারবার।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, আছুর জীবনে এক এক করে জীবন সঙ্গী হয়ে এসেছে চারটি স্বামী। মোহাম্মদ নাছির, আব্দুর কাদের, ইউসুফ হালিম, মোঃ রাসেল। বর্তমানে তার জীবনে রয়েছে ৪নং স্বামী মোঃ রাসেল। শুধু আছু বেগম নয়, তার পরিবারের সবাই পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী বৈদ্যঘোনা এলাকায়।
তারা দুই বোন শহরের মাদক রাণী হিসাবে খুব পরিচিত লাভ করেন। আছুর ৪নং স্বামী মোহাম্মদ রাসেল এবং ১নং সাবেক স্বামীর মোঃ নাছিরে বড় ছেলে ইমরান তাদের বিরুদ্ধে ও অসংখ্য মাদক আইনে মামলা রয়েছে। তারা সবাই সদর মডেল থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, আছু বেগম এবং তার চতুর্থ স্বামী মোহাম্মদ রাসেলের নেই দৃশ্যমান কোন ব্যবসা। হঠাৎ বনেছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। কয়েকবছর আগেও ছিল তাদের সংসারে টানাপোড়ন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্হা ছিল তাদের সংসারে। ছয় সাত বছরে আছু বেগম দম্পতি বনেছে কোটিপতি, আছু দম্পতি এখন অঢেল সম্পদের মালিক ও হয়েছেন আছুর স্বামী মোহাম্মদ রাসেল ব্যবহারের জন্য কিনেছে দুইটি দামী বাইক, কিনেছেন একটি লক্ষ টাকা দামের দামী কার। শহরের বিভিন্ন জায়গা কিনেছে নামে বেনামে জমি। বৈদ্যঘোনায় খাঁজা মঞ্জিল এলাকায় কিনেছে বসবাসের জায়গা, সে জায়গা তৈরি করেছে আলিশান বাড়ি। কিভাবে এই অল্প দিনে এত সম্পদের মালিক হলেন আছু বেগমের পরিবার তা খতিয়ে দেখার দাবি স্হানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনচ্ছোক এক স্থানীয় লোক বলেন, রাসেলের ব্যবহারিত বাইক দুইটি এবং কারটি করে সরাসরি টেকনাফ থেকে ইয়াবা আনেন আছু বেগম। সেগুলো আছুর স্বামী মোহাম্মদ রাসেল এবং তার সহযোগী আবু তাহের প্রকাশ কালা তাহের বিভি- ন্ন জায়গা খুচরা পাইকারি সাপ্লাই করে থাকেন। কালা তাহেরের নামে ও রয়েছে সদর মডেল থানায় একাধিক মামলা।
অনুসন্ধানে-জানাযায়, ইমরান আছু বেগমের প্রথম স্বামী মোঃ নাছিরের বড় ছেলে। সে কয়েক মাস আগে "ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ চেকপোস্টে আটক হয়। আর আটক হওয়া ইয়াবাগুলো হল ইমরানে মায়ের ছোট বোন তার আন্টি সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছু বুড়ির। আটকের পর অল্পদিনের ব্যবধানে আট লক্ষ টাকা খরচ করে কোনছু বুড়ি তার বড় বোনের ছেলে কে জেল হাজতে থেকে বের আনেন। ইমরান জেল হাজত থেকে বের হয়ে আবারো বৈদ্য ঘোনা এলাকায় দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।
আরিফ নামের এক ব্যক্তি জানান, সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছুর স্বামীর মোহাম্মদ মকছুদ প্রকাশ স্বপন। সে শূন্য পকেটে ফেনী থেকে কক্সবাজারের এসে ছিলেন জীবিকার তাগিদে। এসে কোনছু বুড়ির বাবা মৃত্যু বাদশা কবিরাজের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ক্যাম্পাস করে গাছগাছারির ওষুধ বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। আসতে আসতে স্বপন নিজে রাস্তায় ক্যাম্পাস করতে শুধু করেন পরে স্বপন হয়ে উঠেন একজন সাপুড়ি এবং রাস্তায় সে সাপের খেলা দেখাতেন। এভাবে কয়েকটা বছর কেটে যাওয়ার পর বিয়ে করেন সেলিনা আক্তার প্রঃ কোনছু বুড়ি। কোনছু বুড়ি কে বিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বপন। কোনছু বুড়িদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল মাদক ব্যবসা। আর এই ইয়াবার ছোঁয়ায় রাতারাতি কোটিপতি বনে যান স্বপন দম্পতির। বর্তমানে স্বপন দম্পতির কোটিপতি বললে চলে। স্বপনের রয়েছে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে জমি, সে বর্তমানে বৈদ্যঘোনায় জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন।' স্বপন সাপের বাক্স করে ইয়াবা নিয়ে যান ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভিন্ন জেলায়। সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন জেলায় স্বপনের নামেও একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
বৈদ্য ঘোনার বাসিন্দা মরজিনা আক্তার জানান, কিছু দিন আগে খাঁজা মঞ্জিল এলাকার সুফিয়া নামের এক মহিলা থেকে চার হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছু বুড়ি স্বামী স্বপনের মাধ্যমে একটি গাড়ি করে ঢাকায় পাঠান সেগুলা ঢাকা ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়।
এই বিষয় রাসেলেট মুঠোফোন কল দিয়ে মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব বিষয়ে নাসরিন সুলতানা আছু বেগম মুঠোফোনে জানান- এইগুলা আমার সাথে দুশমনি করতেছে। আমার সাথে আমার ছেলের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের গাড়িবাড়ি আছে, তবুও আমি ভিক্ষা করে খাচ্ছি। আশেপাশে মানুষের থেকে জিজ্ঞেস করেন দেখেন। আমার স্বামী হোটেলে চাকরি করে। প্রদীপের আমলের আমার ভাইকে যেমন মেরে পেলেছে তেমনি আমাকেও ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা একটা দিয়েছে। আমি আমার শাশুড়িকে দেখতে গিয়েছিলাম বিমানে করে। আপনি নিউজ না লিখে আমার সাথে দেখা করেন, আপনাদের অনুরোধ করতেছি আপনারা নিউজ টা লিখিয়েন না, আমি আপনার সাথে দেখা করবো। আপনাকে আমি বারণ করতেছি আপনারা নিউজ টা দিয়েন না, আমি আপনার সাথে দেখ করবো।
অপর অভিযুক্ত সেলিনা আক্তার সেলি প্রঃ কোনছু বুড়িকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বলেন, আমরা প্রতিদিন অভিযান করছি অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে যাদের পারছি তাদের দরছি। আমরা তদন্ত করে দেখব যদি জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসরিন সাকিব বলেন- আমরা কক্সবাজারের সকল জায়গাতে ইয়াবা বিস্তার যেন বাড়াতে না পারে এই বিষয়ে পুলিশ কাজ করতেছে। এ বিষয় আমাদের কাছে নিউজ আছে, আমরা হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের অফিসাররাও চেষ্টা করতেছে।
0 Comments